১৭টি গ্রামের ২০০০ ছাত্র ছাত্রী হাইটেক ইংলিশ ক্লাসের সাহায্যে ইংরাজী শিখবে
ক্রিসওয়ার্কস টেকনোলজির উদ্দ্যোগে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের বহু গ্রামে হাইটেক ইংলিশ ক্লাসরুমের সাহায্যে বাচ্চারা আজ সাবলীল ভাবে ইংরাজিতে পড়তে, লিখতে, ও কথা বলতে শিখছে । অনেক শিক্ষক শিক্ষিকা এই হাইটেক ক্লাসের ট্রেনিং নিয়ে দক্ষ ইংরাজী শিক্ষক হয়ে উঠছে । অনেক শিক্ষিত যুবক যুবতী নিজের এলাকায় এই হাইটেক সেন্টার খুলে আয় করছে এবং অনেক স্কুল তাদের পাঠ্যক্রমের মধ্যে এই হাইটেক ক্লাস রুম অন্তর্ভুক্ত করে তাদের স্কুলকে আরও উন্নততর করে তুলছে ।
গ্রামের অনেক মেধাবী ছাত্র ছাত্রী অঙ্ক, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোলের মতো বিষয়ে ভালো বূৎপত্তি হওয়া সত্ত্বেও পরবর্তী পেশাদারি জীবনে ইংরাজী কমিউনিকেশন স্কিলস না থাকার দরুন অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হয় । অথচ স্বচ্ছল পরিবার থেকে আসা শহরের নামি দামি স্কুলে পড়া বাচ্চারা ছোট থেকেই অনেক উন্নত পরিকাঠামোর সুযোগ সুবিধা পেয়ে পেশাদারি জীবনের প্রতিযোগিতায় অনেকটাই এগিয়ে থাকে ।
বর্তমানে গুগল, ইন্টারনেট, হোয়াটস্যাপ ও ফেসবুকের দুনিয়ায় বিশ্বের প্রায় সবকিছুই আজ মানুষের হাতের মুঠোয় । স্মার্টফোন, ট্যাবলেট এবং ল্যাপটপের সাহায্যে আজ আমরা অনেক কিছুই ঘরে বসে জানতে ও শিখতে পারি । এই হাইটেক ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্রিসওয়ার্কস টেকনোলজি, আই.আই.এম কলিকাতা ইনোভেশন পার্কের সহযোগিতায় গ্রামের প্রতিটি মানুষের কাছে উন্নততর শিক্ষা পরিষেবা পৌঁছে দিচ্ছে । যে সব বাচ্চারা এই হাইটেক সেন্টার বা স্কুলের সুবিধা পায় তারা অতি অল্পদিনের মধ্যেই “word construction” থেকে শুরুকরে স্টেজে উঠে “anchoring” পর্যন্ত করতে পারে । যেকোনো স্নাতক উত্তীর্ণ যুবক যুবতী এই হাইটেক সেন্টারের ট্রেনিং নিয়ে তার এলাকায় বা স্কুলে এন্ড্রোয়েড ট্যাবলেটের মাধ্যমে এই ক্লাস চালু করতে পারে । এই সেন্টার থেকে সে আয় করতে পারে এবং তার সাহায্যে গ্রামের অনেক ছাত্র ছাত্রীরা উপকৃত হয় ।
ক্রিসওয়ার্কের এই উদ্যোগের পিছনে রয়েছে চার জন ইঞ্জিনিয়ার শুভজিৎ , গার্গী, কৌশিক এবং বালাগোপাল । তারা প্রত্যেকেই একসময় দেশে বিদেশে বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার সাথে যুক্ত ছিলেন । সমাজের শিক্ষার অসমতা দূর করার উদ্দেশ্যে তারা অনেক বছর ধরে গবেষণা করেছিলেন কর্ণাটকে, তেলেঙ্গানা ও পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন গ্রামে । সেই গবেষণার ফলপ্রসূ এই হাইটেক ক্লাসরুম তৈরী হয় যা বর্তমানে বহু মানুষকে উপকৃত করছে ।
এই হাইটেক ক্লাসরুমের প্রজেক্টের সাথে যুক্ত রয়েছেন গ্রামেরই কিছু শিক্ষিত যুবক সুমন, গোপাল, আনোয়ার ও আফিফ, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের সাহায্যে এই প্রজেক্ট আজ পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটা গ্রামে তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে । গ্রামের অনেক ছাত্র/ছাত্রীরাই নানান কারন বসত বাড়ির থেকে তাদের পড়াশোনার বিষয়ে পর্যাপ্ত সহায়তা লাভ করতে পারেনা যার ফলে তারা ক্লাসে অনেক পিছিয়ে পড়ে । ক্রিসওয়ার্কস হাইটেক ক্লাসের পাঠক্রম এবং প্রযুক্তি এমন ভাবে তৈরী করা হয়েছে যে বছরের শেষে ক্লাসের সব বাচ্চারা সমান স্তরে পৌঁছে যায় । এই হাইটেক ক্লাসের শিক্ষক/শিক্ষিকাদের সারাবছর শিক্ষকতা ট্রেনিং এর সাথে যুক্ত থাকতে হয়, শিক্ষক/শিক্ষিকাদের নিয়মিত হোমওয়ার্ক, পরীক্ষা এবং ক্লাসের ভিডিওর মাধ্যমে তাদের মূল্যায়ন করা হয় ।
ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের ১৭টি গ্রামের ১৭জন মানুষ তাদের গ্রামে এই হাইটেক সেন্টার স্থাপন করেছে, এদের মধ্যে ৯টি স্কুল। এই হাইটেক সেন্টার গুলোর মাধ্যমে ২০১৯ থেকে ২০০০ জন ছাত্র/ছাত্রী ইংরাজীতে পড়তে, লিখতে ও কথা বলতে শিখবে । তাছাড়াও কাশ্মীর থেকে শুরু করে তামিল নাড়ু পর্যন্ত বিভিন্ন মানুষজন তাদের গ্রামে এই হাইটেক ক্লাসরুম সেন্টার খোলবার জন্য আবেদন করেছে ।
ক্রিসওয়ার্কসের উদ্দেশ্য আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে গ্রামের প্রতিটি ছাত্র/ছাত্রী ও শিক্ষক/শিক্ষিকাদের শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতা করা । ইতিমধ্যেই চাকরিপ্রার্থী যুবক যুবতীদের জন্য “Spoken English for Interview” কোর্স এর সূচনা হয়েছে । আগামীদিনে ছোট ছোট ছাত্র ছাত্রীদের পিতামাতাদের জন্য ক্রিসওয়ার্কস এক সফটওয়্যার আন্তে চলেছে যার সাহায্যে পিতামাতারা অতি সহজেই তাদের সন্তানদের শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারবে ।